Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

কাপাসিয়া উপজেলার মৎস্য বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানতে ও পরামর্শ গ্রহণ করতে  এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন


শিরোনাম
গল্প নয় সত্যি
ছবি
ডাউনলোড

সফল চাষি মোঃ মোস্তফা কামাল-এর হাসির উৎস্য-রুপালী মৎস্য

সুস্থ সবল ও মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে মৎস্য খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । জাতীয় অর্থনীতিতে এ সম্ভবনায় মৎস্য সেক্টরের ভূমিকা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলছে। বলা যায় এ দেশের আর্থসামজিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি মৎস্যসম্পদ উন্নয়নের ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০২১-এ উল্লেখিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধানে মৎস্য অধিদপ্তর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে । ফলশ্রুতিতে মৎস্য সেক্টরে অর্জিত হয়েছে দৃশ্যমান সাফল্য। বৈশ্বিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ এখন স্বাদুপানির মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে ৪র্থ, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে ৩য় এবং চাষের মাছ উৎপাদনে ৫ম অবস্থানে । দেশে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বেকারত্ব দূর হয়েছে সম্প্রসারণ হয়েছে নতুন নতুন প্রযুক্তির। এই নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দেশের প্রান্তিক চাষিরা স্বল্প সময়ে অধিক উৎপাদন করে আজ তারা


অনেকেই সফল। মাছ চাষ করে অভিশপ্ত বেকার জীবন থেকে মুক্তি পাওয়া এমনি এক মৎস্যচাষির সফলতার গল্প তুলে ধরা হলো।

মোঃ মোস্তফা কামাল গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়া উপজেলাধীন রায়েদ ইউনিয়নের হাইলজোড় গ্রামে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তারা ০৩ (তিন) ভাই ও ০৩ (তিন) বোন। তিনি পিতা মাতার ৪র্থ সন্তান। পিতা মফিজ উদ্দিন ছিলেন আর্থিক ভাবে সচ্ছল কিন্ত ছেলেদের শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন।

জনাব মো: মোস্তফা কামাল বিগত ১৯৯০ সালে এসএসসি পাস করলেও ১৯৯২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। আর পড়ালেখা চলমান রাখতে পারলেন না। সেসময় ড্যানিডা প্রকল্পের কর্মকর্তা জনাব মো: আলমগীর হোসেন সাহেবের সার্বিক পরামর্শে ৫০ শতক জমি লিজ নিয়ে মাছচাষে মনোনিবেশ করেন। ১৯৯৪ সালে মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, টঙ্গী হতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ০৩ (তিন) মাস মেয়াদী মৎস্যচাষের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ সমাপনান্তে উপজেলা মৎস্য অফিস ও ড্যানিডা প্রকল্পের কর্মকর্তার পরামর্শে মাছ চাষে এগিয়ে চলছেন। এরপর থেকে আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। তিনি উপজেলা মৎস্য অফিস হতে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে খামারে আধুনিক পদ্ধতি কই, শিং, মাগুর, গুলশা ও পাবদা মাছের চাষ করেন। তাঁর নিজস্ব মালিকানাধীন কোন পুকুর না থাকলেও উপজেলা মৎস্য দপ্তরের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে লীজকৃত পুকুরে মাছ চাষ করে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সফল মাছচাষী হিসেবে এ পর্যন্ত ০৩ (তিন) বার পুরস্কৃত হয়েছেন।

বেকার জীবন হতে মুক্ত হতে তিনি নিজ অর্থ ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাঁর খামারের আয়তন দিন দিন বৃদ্ধি করছেন। বর্তমানে তাঁর খামারের আয়তন ৩.৫০ হেক্টর (জলায়তন: ৩:২৪ হেক্টর) এবং পুকুরের সংখ্যা ০৬ (ছয়) টি। তিনি খামারে কার্প মিশ্র মাছের চাষ করেন এবং কার্পের সাথে সাথী ফসল হিসেবে গুলশা, পাবদা, ও শিং মাছ চাষ করেন। বর্তমানে খামারে তাঁর নিজস্ব ২৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে।


তাঁর মাছ চাষের আয় থেকে দুই ছেলের লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের যাবতীয় খরচ মেটান। তিনি সরকারি মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ; ঝলক হ্যাচারী, গৌরীপুর, ময়মনসিংহ এবং ধলা আদর্শ হ্যাচারি, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ থেকে পোনা সংগ্রহ করেন । ২০২০ খ্রি: সালে সর্বমোট উৎপাদন হয়েছে ২৫.১৫ মে.টন এই উৎপাদিত মাছ থেকে তার নিট লাভ হয়েছে ৫.১৮ লক্ষ টাকা।


সেখানে ৫ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পাশাপাশি ১০ টি পরিবার পরোক্ষভাবে সুফলভোগী। সফল চাষি হওয়ায় তিনি এনএটিপি প্রকল্পের একজন লিফ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে প্রশিক্ষণার্থীরা তাঁর খামার পরিদর্শনে আসেন।


তিনি মাছ চাষের মৌলিক বিষয় যেমন পুকুর প্রস্তুতি, পোনা নির্বাচন, পোনা মজুদ, পুকুরের পানির গুনাগুন ঠিক রাখা, মাছকে খাবার প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে বেশ অভিজ্ঞ। উপজেলা মৎস্য অফিস কর্তৃক বাস্তবায়িত এনএটিপি-২ প্রকল্পের লিফ ও সিআইজিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি মাছচাষ বিষয়ে অনেক গভীর জ্ঞান লাভ করেন।  তিনি তাঁর ইউনিয়নের চাষিদেরকে নিয়মিত মাছচাষের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রায়েদ ইউনিয়নে মৎস্যচাষি মোস্তফা কামাল এক অতিপরিচিত নাম। তাঁর পরামর্শে ও কর্মে উৎসাহিত হয়ে অনেকেই এখন মাছচাষে ঝুঁকেছেন এবং অভিশপ্ত বেকার জীবনের ইতি টানছেন। তিনি একজন সচেতন মাছ চাষি। ভাল ফলন পেতে তিনি বিশ্বস্ত সরকারি/বেসরকারি হ্যাচারি হতে মাছের রেনু/পোনা সংগ্রহ করেন। তিনি উন্নত মানের খাদ্য উপকরণ, ভিটামিন, মিনারেল্‌স্ ব্যবহার করে ভাসমান খাদ্য খামারে প্রয়োগ করেন। বর্তমানে তিনি আধুনিক মাছ চাষের জন্য তাঁর খামারে এ্যারেটর স্থাপন করেছেন।

জনাব মো: মোস্তফা কামাল একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, উদ্যমী এবং পরিশ্রমী মৎস্যচাষী। তার মাছ চাষের আগ্রহ ও সাফল্য দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক, কৃষকসহ নানা পেশার লোকজন মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছে। সফল মাছচাষি মোস্তফা কামাল এই এলাকার নতুন মাছচাষিদের কাছে অণুপ্রেরণার পাত্র। মাছ চাষের ফলে নিজের ও এলাকার লোকদের প্রানিজ আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে এবং জাতীয় উৎপাদনেও ভূমিকা রাখছে।

অবস্থান মানচিত্র

জাটকা সংরক্ষন সপ্তাহ ২০২২